মানুষের মাংসের রেস্তোরাঁ — মোজাফ্‌ফর হোসেন

প্রথমেই নগ্নভাবে ধরা দেয় বইয়ের অদ্ভুত নামটি, প্রচণ্ড আগ্রহ ও কৌতূহল বোধ করি। সাধারণত ফ্ল্যাপের লেখা পড়া হয়না, সূচিপত্রও পড়িনা—প্রায়শই তাতে চুম্বক অংশ দৃষ্টিগোচর করতে গিয়ে বইয়ের মূল আকর্ষণ কম্প্রোমাইজড হয়ে যায়।

প্রথম গল্প “একটি খুনের স্বীকারোক্তি” পড়তে গিয়ে ধাক্কার মতো খাই। গল্প শেষে হতবাক হয়ে ভাবি—এটা কী হলো! ফিরে গিয়ে ফ্ল্যাপের টেক্সট পড়ে নিশ্চিত হই এই গল্পগ্রন্থ পুরোটা শেষ না করে রাখতে পারবোনা। এরপরে গোগ্রাসে গিলতে থাকি একটার পর একটা গল্প!

একেক গল্প একেকভাবে ভাবনাকে আন্দোলিত করে। “করোনা, মৃত্যুর আগে ও পরে” গল্প যখন ফোর্থ ওয়াল ব্রেক করে আমি পাঠককে জিজ্ঞাসা করে—কীভাবে মারা গেছি—আমি সত্যিই ধন্দে পড়ে যাই! আসলেই তো আমার মৃত্যু কীভাবে হলো, কী বা কে দায়ী আমার আত্মার মৃত্যুর জন্য?

রূপক বা পরাবাস্তবতার জাদুতে একেকটা গল্প মোড়ানো। চরিত্রগুলোর সাথে সাথে আমিও ভাবি আমার মাথা নেই—তাইতো আমি কিছু দেখিনা, শুনিনা বা বলতে পারিনা। কিংবা আমার মাথায় বাক-স্বাধীনতার চিপ ইমপ্ল্যান্ট করা হয়েছে, এই বুঝি দশ মাত্রার ভাইব্রেশনে অকেজো হয়ে গেলাম। মাথাটা অবশ্য ইতোমধ্যেই কোথাও বিকিয়েছি কিনা বলতে পারিনা!

সমাজের অবক্ষয়, ঘুণে ধরা, মরিচা পড়া সিস্টেমের ভগ্নদশার জলজ্যান্ত পোস্টমর্টেম যেন এই গল্পগ্রন্থ। অদ্ভুতভাবে কৌতুকপূর্ণ ও হাস্যকর অভিজ্ঞতাও হয় গল্পগুলো পড়লে। হতে পারে সেটা সিসিফাসের ঈশ্বরের হাসি!

দুর্দান্ত বই, ঝরঝরে লেখা, লেখকের সব বই দ্রুত সংগ্রহ করার ইচ্ছাপোষণ করি।

বই : মানুষের মাংসের রেস্তোরাঁ
লেখক : মোজাফ্‌ফর হোসেন
প্রকাশনা : পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স
প্রকাশকাল : ২০২১
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ১২০
মলাট মূল্য : ২৩০

Leave a Reply