চাহিদারা হন্যে — কিশোর পাশা ইমন

চাহিদারা হন্যে – দ্য ইনসেইন আর্জ পড়ার পর আমার প্রথম কৌতূহল বহুবাচনিক “চাহিদারা” কী করছে বইয়ের নামে! বইয়ের ফ্ল্যাপ এমনকি শিরোনামের ইংরেজি সাবটাইটেল অংশেও কিন্তু “আর্জ” বলা হয়েছে, “আর্জেস” না! দু’জন মানুষের গলা কেটে খুন করতে চাওয়া সাইকোপ্যাথের ইচ্ছেটা পুনরাবৃত্তিমূলক তাই কি এরকম নাম!

কিশোর পাশা ইমনের “এয়ারপোর্ট নভেল” চাহিদারা হন্যে। এটা লেখকের পরীক্ষামূলক একটি কাজ। এয়ারপোর্ট নভেল সাহিত্যের একটা ধারা যেখানে সাধারণত গল্পের পটভূমি ও গতিময়তায় জোর দেওয়া হয়। অন্যান্য শৈল্পিক উপাদান তেমন প্রাধান্য পায় না। ধর তক্তা মার পেরেক ভাবে পাঠককে দ্রুত একটা গল্পে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এবং তার চেয়েও দ্রুত গল্পের সংঘাত ও পরিণাম হাজির হয়ে যায়। পাঠক ঝটপট একটা কাহিনী অভিজ্ঞ করবে এটাই মূল উদ্দেশ্য।

চাহিদারা হন্যে পড়তে খুব বেশী হলে ১ ঘণ্টা লাগতে পারে। এ বিচারে বলা যায় লেখক সার্থক। আমাকে ক্ষিপ্রবেগে কাহিনীর জালে জড়িয়ে রুদ্ধশ্বাস ভ্রমণ করিয়েছে লেখাটা। পাতার পর পাতা উল্টে যেতে একটুও বেগ পেতে হয় নি।

আমি যেটা পায়নি তা হলো সাইকোপ্যাথটার মনস্তাত্বিক রেখাপাত। যদিও ফ্ল্যাপ থেকে অনুমিত হয় সাইকোপ্যাথটার গলা কেটে খুন করার শক্তিশালী একটা চাহিদা রয়েছে। পুরো বই জুড়ে এই চাহিদার অনুপস্থিতি আমাকে বিস্মিত করেছে। সাদামাটা সাইকোপ্যাথের বর্ণনা সম্ভবত বেশী সাদামাটা হয়ে গোটা অভিজ্ঞতাকে পানসে করে দিয়েছে। তার মনস্তত্বের “কেন” দিকটা ধোঁয়াশা রাখা হয়েছে তা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার বরং মনে হয়েছে এটা পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস হলেও এমন রহস্যময়তা ভিন্ন মাত্রা যোগ করতো। কিন্তু আমার প্রশ্ন “কেন” নিয়ে নয়। কোথায় তার “ইনসেইন” আর্জ—সেই স্পষ্ট উন্মত্ত চাহিদা যা তাকে বইয়ের পাতায় সাইকোপ্যাথ বানাবে। পরিপ্রেক্ষিতে এক গাদা খুনের দাবী বা গুজব সাইকোপ্যাথ হবার বিষয়টাকে ন্যায়বিচার করেনি।

সাইকোপ্যাথ থেকে ভিজিল্যান্টি বা অতন্দ্র প্রহরী হয়ে যাবার মেটামরফোসিসটা অস্পষ্ট। যদিও আগের অনুচ্ছেদে বলেছি, সে যে সাইকোপ্যাথ এই বিষয়টাই তর্কসাপেক্ষ। তবে এমন হতে পারে তার খুন করার তীব্র ইচ্ছেকে সে ডেক্সটারের মতো ভিজিল্যান্টি হবার দিকে বাহিত করে। পারভেজের বর্ণনাতে আসা ঐ খুনগুলো যদি সত্যিই সে করে থাকে তাহলে তাকে ভিজিল্যান্টি বলতে আমরা বাধ্য। পাঠককে সহানুভূতিশীল করার এই সূক্ষ্ম প্রচেষ্টাটা ভালো!

পেনাল্টিমেট যে শোডাউনের কথা বলতে চাচ্ছি সেটা পাঠক মাত্রই বুঝতে পারবেন। সেখানে আরেকটা অস্পষ্ট ব্যাপার রয়ে গেছে। ঐ ব্যাপারটার জন্য যে ব্যক্তি মূল দায়ী সেই সালাউদ্দিন বেঁচে গেলো নাকি মেরেছে কিন্তু বলা হলো না! এই প্রসঙ্গে বলে রাখি পুলিশের এই এলাবোরেট পরিকল্পনাটা একটা দারুণ চমক। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার আক্ষরিক উদাহরণ!

বানান ভুল থাকা এবং সেটা নিয়ে অনুযোগ করা একটা ক্লিশে পর্যায়ে চলে গেছে। সেই তুলনায় এই বইয়ে কমই ভুল আছে যদিও। কিন্তু আলাদা করে বানান সংশোধনে দু’জন মানুষের নাম থাকায় ভেবেছিলাম হয়তো থাকবেনা। আশা করছি বানান ভুলগুলো এবং বিরাম চিহ্নের অনুপস্থিতিগুলো কাটিয়ে উঠবে পরের মুদ্রণে। যেহেতু দেখলাম দ্বিতীয় মুদ্রণ আসছে, সেহেতু বিষয়টা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।

বইয়ের প্রচ্ছদ ভালো হয়েছে। হাতুড়ি দেখে ভেবেছিলাম “হাথোড়া তেয়াগি” ধরণের কিছু আছে নাকি! সেই “চাহিদা” পূরণ হয়েছে ভালমতোই!

বইটা পেপারব্যাকে থাকলে ভালো হতো। “এয়ারপোর্ট নভেল”-এর মতো এমন সীমিত পরিসরের বই ২৫০ টাকা মলাট মূল্য তার উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক নয় কি? মানে এই ধরণের বইগুলো তো উপস্থিত তাড়নাতে কেনার কথা, অল্প দামে কিনবে, পড়বে, ফেলে দেবে ধরণের!

সবার উচিৎ বইটা পড়া। আমার মনে হয়েছে সব মিলিয়ে লেখক সফল। এরকম কাজ আরও আসা উচিৎ। সম্প্রতি এরকম আরও কিছু বই কিনেছি, এর মধ্যে আমিনুল ইসলামের “বাটারফ্লাই ইফেক্ট” পড়ার জন্য মুখিয়ে আছি।

বই : চাহিদারা হন্যে
লেখক : কিশোর পাশা ইমন
প্রকাশনা : সতীর্থ প্রকাশনা
প্রকাশকাল : ২০২০
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ১৪৪
মলাট মূল্য : ২৫০

Leave a Reply