Mahmudul Hasan
Programmer, Cinephile, Bookworm, Traveler
Programmer, Cinephile, Bookworm, Traveler
১.
সপ্তরিপু একটি ঐতিহাসিক থ্রিলার। ইতিহাসের পাতায় স্থান পাওয়া অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ অর্থে ‘ঐতিহাসিক’ কিনা সেটা সময় বলে দেবে; এখানে ঐতিহাসিক বলতে ইতিহাস আশ্রিত বুঝাচ্ছি। বৃটিশ-ভারত তথা পুরো দুনিয়ার কুখ্যাত খুনে দস্যুদল ‘ঠগী’ এ উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে জানা যায়, বর্তমান সময়ের এক পুলিশ অফিসারের কথা। যে সদ্য ডিমোশন পেয়ে ট্রান্সফার নিয়ে এসেছে ময়মনসিংহ শহরে। দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি, জড়িয়ে পড়ে অদ্ভুত এক কেসের সাথে। পরিত্যক্ত এক পুকুরের নিচ থেকে উদ্ধার হয়েছে পুরনো এক গাড়ি, আর ভেতরে এক কঙ্কাল! তদন্ত ইঙ্গিত দিচ্ছে কয়েকশ বছর আগের ঠগীর দিকে।
২.
অতীত ও বর্তমান দুই সময়রেখায় কাহিনী আগায়। দারুণ বিষয় হলো, দুই সময়ের কাহিনী বা চরিত্রগুলো একে অপরের পরিপূরক। অতীতের গল্প যেখানে শেষ হয়, সেখান থেকেই বর্তমানের গল্প শুরু—এই ধারাবাহিকতা থাকে প্রত্যেকটা অধ্যায়ে। বর্তমানের গল্পে পুলিশ অফিসার বাশার প্রধান। অতীতের গল্পে ক্যাপ্টেন ম্যাকফি।
শ্রীপান্থের ঠগী বইটা যারা পড়েছেন তারা ঠগী বিষয়ে তেমন নতুন কিছু জানতে পারবেন না। বরং বেশকিছু ক্ষেত্রে ইতিহাসের ব্যত্যয় দেখবেন। সপ্তরিপুর কাহিনীর প্রয়োজনে কিছু কাটা-ছেঁড়া, পরিমার্জন, রূপান্তর করা হয়েছে। কিছু জিনিস ক্লিক করেছে কিছু করেনি। ফিরিঙ্গিয়ার সাথে স্লিম্যানের দ্বন্দ্বকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা কাহিনীর স্বার্থে মানানসই। কিন্তু ঠগীদের ভয়াবহতা বুঝানোর জন্য তাদেরকে দিয়ে রক্তপাত করানোটা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত।
৩.
যদিও ঠগীরা সেন্ট্রাল এলিমেন্ট কিন্তু তাদের সরব উপস্থিতি অনেক পরে। আমার মনে হয়েছে, ম্যাকফির চরিত্রটাকে না এনে স্লিম্যানকেই এই টাইমলাইনের সেন্ট্রাল ক্যারেক্টার করলে বেশি ভালো হতো। তাহলে স্লিম্যানের তদন্ত, অভিযান আরও ফ্লেশড-আউট হতে পারত। ম্যাকফির একই বৃত্তে ঘুরপাকের কারণে যে একঘেয়েমি চলে এসেছে, সেটা এড়ানো যেত। অবশ্য যেভাবে আছে তাতেও, এই অতীত টাইমলাইনটাই তুলনামূলকভাবে আমার বেশি পছন্দ হয়েছে বর্তমানের চেয়ে। বাশারের তদন্ত কিংবা ওসি মল্লিকের সাথে তার দ্বন্দ্ব সেভাবে আগ্রহ জাগাতে পারেনি।
বাশারের কিংবা ম্যাকফির ব্যাকস্টোরি গল্পে এমন জায়গায় এসে জানানো হয়েছে যখন আর এটা এক ফোটাও গুরুত্ব রাখে না। বরং তাদের গল্প আগে জানতে পারলে চরিত্রগুলোর ব্যাপারে পাঠককে সমবেদী করা সম্ভব ছিল।
অতীত, বর্তমান দুই জায়গাতেই কিছু পার্শ্ব চরিত্রকে খুব মনে ধরেছে। এর মধ্যে মহাবীর সিং, ডুম্বুর, জোহরা ও দারোগা মজিদ অন্যতম।
লেখক বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে সোশ্যাল কমেন্ট্রি করেছেন। নীতির প্রশ্ন তুলেছেন, সর্বোপরি ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একটা জিনিস দেখার ব্যাপারে আগ্রহী করেছেন।
৪.
সবমিলিয়ে সপ্তরিপু আমার ভালো লেগেছে। এই ভালো লাগাটা পরিপূর্ণতা পেত যদি এত অজস্র বানান ভুল না থাকতো। সম্পাদনাতে আরও গভীর মনোযোগ দেওয়া যেত, প্রায়ই এমন হয়েছে, একই জিনিস ঘুরেফিরে আসছে—এমনকি একই প্যারাতে! এরকম কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি কাটিয়ে উঠলে সপ্তরিপু নিশ্চিতভাবেই ‘ঐতিহাসিক’ থ্রিলার হয়ে যেতে পারে—কে জানে!
বই : সপ্তরিপু
লেখক : রবিন জামান খান
প্রকাশনা : অন্যধারা
প্রকাশকাল : ২০২১
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ৪১৬
মলাট মূল্য : ৬০০